যেসব কারণে ভালো বাবা-মায়ের সন্তানেরা নষ্ট বা খারাপ হয়!

যেসব কারণে ভালো বাবা-মায়ের সন্তানেরা নষ্ট বা খারাপ হয়!

ইসমাঈল সাহেব যদিও আলেম ছিলেন না, কিন্তু অত্যন্ত ধর্মভীরু, তাহাজ্জুদগোজারী লোক ছিলেন এবং নিয়মিত জামাতে প্রথম তাকবিরের সঙ্গে নামাজ আদায়ে সচেষ্ট ছিলেন। তার সর্বমোট ছয়টি সন্তান ছিলো। ইন্তেকালের পূর্বে তিনি যে পরিমাণে কষ্টকর অস্থিরতা ও যন্ত্রণার মধ্যে ছিলেন, তা ছিলো কেবল সন্তানদের জন্যে প্রচ- দুশ্চিন্তা। তার তিনটি সন্তানের বিয়ে হয়েছিলো। 

কিন্তু ছেলেরা ছিলো এখনো অবিবাহিত। এদের মধ্যে দুটি ছোটো ছেলে তাদের জন্যে দুর্নামের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। তারা উল্টাসিধা ও ভবঘুরের মতো হয়ে গিয়েছিলো এবং পুরো মহল্লা ও এলাকার অধিবাসীরা তার কারণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলো। দ্বিতীয় ছেলেটি সীমাহীন দুর্নামের অধিকারী হয়ে গিয়েছিলো।

এই সন্তানদের বাবা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত কেঁদে কেঁদে বলতে থাকেন— হে আল্লাহ, আমার মনে পড়ছে না, আমি জীবনে এমন কী পাপ করেছি, যার কারণে আমাকে আজ এমন দুর্দিন দেখতে হচ্ছে। তার সমবয়সীরাও বলছিলো যে, তিনি ছেলেবেলা থেকেই সজ্জন ও ভালো মানুষ ছিলেন। 

সবসময় হারাম-হালাল বাছবিচার করে চলতেন। কখনো মাদক, ব্যভিচার ও জুয়াবাজির ধারেকাছেও ভেড়েন নি। একদিকে এমনই ছিলো তার ইতিবাচক অবস্থা, আর অন্যদিকে তার সন্তানদের নেতিবাচক পরিস্থিতি। এই কঠিন প্যাঁচের গেড়ো খুলছিলো না। 

কয়েকজন ব্যক্তি তার ব্যাপারে গভীর পর্যবেক্ষণ করলেন। এ ক্ষেত্রে সমকালীন এক বুজুর্গ সাহায্যে এগিয়ে এলেন এবং বিষয়টি শীঘ্রই বোঝা গেলো। তার বুজুর্গ সঙ্গীর বক্তব্য ছিলো— যৌবনকালে মসজিদে যাওয়ার সময় যখন দুষ্ট ছেলেরা তার সামনে পড়তো, তাদের তিনি ধিক্কার দিতেন যে, তোদের কোন বদমাশ বাবা জন্ম দিয়েছে রে? তোদের বাবা কি হারাম রোজগার করে আর সেগুলো তোদের খাওয়ায়, যার কারণে তোদের এই দুরবস্থা হয়েছে?

স্বজনদের কারও কোনো নেতিবাচক, অপছন্দনীয় ও অবিশাসযোগ্য কথা যদি কানে আসতো, তবে তিনি সবার সামনে মন্তব্য করতেন যে, ইতরদের সন্তান ইতরই হয়ে থাকে। এই ছেলেদের বাবাও যুবক থাকতে এমন কোনো কাজ করে থাকবে। এ জন্যেই তার ছেলেদের এই অবস্থা হয়েছে।

মোটা কথা, কাউকে ধিক্কার দেয়া এবং কারও পাপের কারণে তাকে লজ্জা দেয়ার ক্ষেত্রে তার জুড়ি মেলা ভার ছিলো। এই কথা শুনে আল্লাহর রাসূল সা.-এর হাদিস মনে এসে গেলো— কোনো ব্যক্তি কাউকে যদি তার পাপের কারণে লজ্জা দেয়, তবে মৃত্যুর পূর্বে নিজেই সেই পাপে সে জড়িয়ে পড়বে। নবি করিম সা. বলেছেন— কারও বিপদে খুশি হলে আল্লাহ তায়ালা তার দোষ গোপন রাখবেন না।

আমাদের এই কথাটি বেশ ভালো করে বুঝে নেয়া উচিত যে, সন্তানদের এই মন্দ পরিণতি যুবক বয়সে তার মন্দভাষণ ও অন্যদের ধিক্কার দেয়ার ফল হতে পারে। তার সেই বুজুর্গ বন্ধু এটাও বলেন— নিজের সন্তানদের ক্ষেত্রে তিনি অত্যন্ত কঠোর আচরণ করতেন। 

তাদের কোনো অযাচিত কাজ তিনি কিছুতেই সহ্য করতেন না। ধমকাতেন, মারতেন এবং ক্ষুদ্ধ হয়ে কখনো সখনো তাদের ইবলিস, শয়তান, অভিশপ্ত ও প্রত্যাখ্যাত ইত্যাদিও বলতেন। হতে পারে, তা তক্ষুণি খোদার কাছে মঞ্জুর হয়ে গেছে। এ জন্যেই হয়তোবা আল্লাহ তায়ালা তার সন্তানদের শয়তানের বৈশিষ্ট্যধারী বানিয়ে দিয়েছেন। 

কেননা, সন্তানদের ব্যাপারে মা-বাবার দোয়া যেভাবে দ্রুত কবুল হয়, একইভাবে বাবা-মার বদ দোয়াও সন্তানদের বেলায় দ্রুত কার্যকর হয়ে দেখা দেয়। তাই কখনো মনের ভুলেও, রাগে ও উত্তেজিত হয়েও নিজের সন্তানদের ধমকানোর ক্ষেত্রে গলদ নামে ডাকা উচিত নয়। এমনও হতে পারে সেটাই কবুল হওয়ার সময় এবং তার প্রভাব প্রকাশ পেয়ে গেলো।

তিনি যদি তার সন্তানদের ক্ষেত্রে দৃঢ়তার সাথে আল্লাহর নির্দেশিত নীতিমালা পালন ও দোয়া-প্রার্থনার মাধ্যমে নিজের সন্তানদের প্রতিপালন করতেন এবং অন্য কারও সন্তানকে খারাপ না বলতেন, সম্ভবত তাহলে এমন দুর্দিন তাকে দেখতে হতো না। 

আল্লাহর কাচে আমাদের প্রার্থনা করা উচিত— হে আল্লাহ, আমাদের এমন স্ত্রী ও সন্তান দান করুন, যারা আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা বয়ে আনে এবং আমাদের খোদাভীরুদের নেতা বানান।-প্রিয়.কম

সূত্র : বিখরে মোতি, খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ১১০১

লেখক : মাওলানা ইউনুস পালনপুরি রহ.

Share on Google Plus

About নিউজ রুম

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment