"ও আমাকে বিয়ে করলে দুলাভাই ওর বোনকে তালাক দেবে..."

"ও আমাকে বিয়ে করলে দুলাভাই ওর বোনকে তালাক দেবে..."


জীবন থাকলে সম্পর্ক থাকবেই। আর সম্পর্ক থাকলে থাকবে সমস্যা। প্রতিদিন ফেসবুকের ইনবক্সে ও ই-মেইলে আমরা অসংখ্য সম্পর্ক ভিত্তিক প্রশ্ন পাই, যেগুলোর কথা হয়তো কাউকেই বলা যায় না। 

আপনি চাইলে নিজের এমনই কোন একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যার কথা লিখে জানাতে পারেন আমাদের। আমরা প্রতিদিন চেষ্টা করবো বাছাইকৃত কিছু সমস্যার সমাধানে কাঙ্ক্ষিত পরামর্শটি দেবার। সমস্যার কথা লিখে জানান আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। নাম গোপন রাখতে চাইলে লিখে দেবেন "নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক"। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা। 

"আমি আমার একটি সমস্যার জন্য পরামর্শ চাই রুমানা আপুর কাছে। আপু, আমি খুব বড় একটি সমস্যার মধ্যে আছি। বিস্তারিত বলছি, আশাকরি একটি ভালো পরামর্শ দেবেন। 

আপু, একটি মেয়ের সঙ্গে আমার প্রায় তিনবছর যাবত সম্পর্ক। আমি ওরজন্য সব কিছু করেছি। আমি বি.বি.এ পড়া অবস্থায় সম্পর্ক হয়। ও এস.এস.সি পাশ করেছে, এখন এইচ.এস.সি পরিক্ষা দেবে। ও বলেছিল- এইচ.এস.সির আগেই ওর পরিবার থেকে ওকে বিয়ে দিয়ে দিতে পারে; তাই আমি বি.বি.এ শেষ না করে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়ে বিদেশে যাবার চেষ্টা করতে থাকি, কিন্তু ভালো কোথাও যাওয়া হয় নি। গত ছমাস আগে একটি দেশে এলাম যার অবস্থা ভালো না। ওর পরিবার আমাদের সম্পর্কের কথা জানতে পারে এবং ওকে অন্যত্র বিয়ে দেবার জন্য চাপ দিচ্ছে অনেক আগে থেকেই। ও আমাকে জানায়। আমি বলি- সহ্য করো এবং অপেক্ষা করো। সেই তাই করে। শেষমেশ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে ধরা পড়ে, তখন ও আমাকে ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেবার জন্য চাপ দেয়। ওর এক কাজিন আমাকে ফোন করে বলে আমি যেন ওর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাই। ওই কাজিন আমাকে কখনোই সাপোর্ট দিতেন না, কিন্তু উনার কথায় মনে হলো সমস্যা খুব বেশি তাই আমি প্রস্তাব পাঠানোর জন্য আম্মুকে বলি, আম্মু রাজি হন নি। আমাকে বোঝাতে চেয়েছেন। পরে আমি না মানায় আব্বুকে বলতে রাজি হন। 

বলে রাখি- আমাদের পরিবার কিংবা ওর পরিবার, কেউ-ই আমাদের এই সম্পর্ক পছন্দ করে না। আমার এক কাজিন বোন আমার সঙ্গে কথা বলে আমার আব্বুকে বুঝিয়ে রাজি করান।কিন্তু ওদের ওখানে খবর নিতে গিয়ে আব্বু পিছিয়ে আসেন এবং জানান যে তিনি ওইখানে আমাকে বিয়ে করাতে রাজি নন। অন্য কেউ মধ্যখানে প্যাঁচ লাগিয়েছে। এরমধ্যে ওরাও জেনে গিয়েছে যে আমার বাবা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যেতে পারেন। কিন্তু কে যেন ওদের পরিবারে কল দিয়ে নানান ধরণের কথা বলে আমাদের পরিবার সম্পর্কে। 

যাহোক, দুই পরিবারের মধ্যে এভাবে বেশ দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। এখন আমার প্রেমিকা শুধু কান্না করে, আমিও সহ্য করে থাকতে পারি না। সবকিছু কেমন ওলট পালট হয়ে গিয়েছে! ও আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না, আমিও ওকে ছাড়া থাকতে পারবো না। এইসব দেখে আমার কাজিন আপু আমাকে বলেছে- তুই চলে দেশে চলে আয় এবং ওকে বিয়ে করে চলে যা। পরে আমি সবাইকে ম্যানেজ করতে পারবো, তখন আর কেউ মানা করতে পারবে না। কিন্তু ওকে বলার পর ও বলেছে- এমন কিছু ঘটলে ওর দুলাভাই ওর আপুকে ছেড়ে দেবে। আর ও ছোটবেলা থেকেই ওর আপুর কাছে মানুষ, কারণ ওর আম্মু মারা গেছে। আমি যখন ওকে ভিডিও কল করি তখন বোঝা যায় যে ও কাঁদে আর রাতে ঘুমায় না। আমিও ঘুমাতে পারি না ঠিক মতো। এখন আপু, ওকে ওর পরীক্ষার পরে বিয়ে দিয়ে দেবে, এটা ১০০% সিওর। আর ও বলেছে, ওকে ওর দুলাভাই ছোট থেকে বড় করেছে, আপন বোনের মতো জেনেছে। এখন ও কী করবে নিজেও বুঝতে পারছে না। আমাকেও ছাড়তে পারবে না, আবার পরিবার থেকেও মত নেই। আবার আমার পরিবারও স্বাভাবিকভাবে কিছু মেনে নেবে না। 

সময় খুব কম। আপু, এখন আমি কী করবো? আমি ওকে ছাড়া কিছু চিন্তা করতে পারি না। ওর অন্য কথাও বিয়ে হয়ে গেলে আমি বা ও কেউই জীবনে সুখী হতে পারবো না। এখন উপায় কী? আপু আমি শুধু ওকে চাই। এখন বলুন আমি কী করবো?"  

পরামর্শ:

আপনাকে বিয়ে করলে দুলাভাই কেন মেয়েটির বোনকে তালাক দেবে, এটা আমার কাছে বোধগম্য না। ধরে নিলাম যে কোন একটা কারণে দেবে। কিন্তু দেখুন ভাই, নিজের স্ত্রীকে তালাক দেয়া এত সহজ না। বিশেষ করে শ্যালিকার জন্য তো আরও না। এগুলো সবই মুখের কথা। ভয় দেখানো বা ইমোশনাল ব্ল্যাক মেইল বলতে পারেন। জীবনে মাঝে মাঝে এমন জিনিসে ভয় পেলে চলে না, কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতেই হয়, এখন আপনাদের সেই রকম একটা সময়। 

যেহেতু আপনার বা তাঁর কারো পরিবারিই কোনভাবে মানবে না, তাই আপনাদের সামনে একটাই পথ খোলা আছে ভাইয়া। আর সেটা হচ্ছে নিজেরাই বিয়ে করে নেয়া। তবে বিয়ের আগে আপনি দুটি জিনিস ভালো করে ভেবে দেখুন। এক, মেয়েটির কি ১৮ বছর বয়স হয়েছে? ১৮ এর আগে বিয়ে করতে পারবেন না। করলে উল্টো আইনি সমস্যা হবে। দুই, বিয়ে করে আপনি কি মেয়েটিকে নিজের সাথে নিয়ে যেতে পারবেন? কারণ যদি দেশে রেখে যান, তাহলে হয়তো পরিবার জোর করে ডিভোর্স করিয়ে দেবে। সেক্ষেত্রে এমন কোথাও কি রাখা সম্ভব যেন পরিবার জোর করতে না পারে? তাছাড়া বিয়ের পর দুজনে দূরে থাকলে তৃতীয় পক্ষ নানান সমস্যা তৈরি করবে জীবনে, এটা কি সামাল দিতে পারবেন? তিন, আপনার কি এই মুহূর্তে স্ত্রীকে ভরণপোষণ দেয়ার মত আর্থিক ক্ষমতা আছে? 

যদি উত্তর গুলো হ্যাঁ হয়, তাহলে আপনারা সেই কাজিনের কথা অনুযায়ী বিয়ে করে ফেলতে পারেন। একবার আপনারা বিয়ে করে ফেলার পর আসলে কেউ কিছু করতে পারবে না। কিন্তু উত্তর গুলো না হলে, বিশেষ করে বয়স যদি ১৮ না হয়, তাহলে যে করেই হোক বিয়ে বন্ধ করতে হবে। সেক্ষেত্রে আপনার পরিবারই শেষ আশা। যে করেই হোক পরিবারের মাধ্যমে প্রস্তাব পাঠাতে হবে আপনাকে। এবং দুই পরিবার মুখোমুখি হলে অনেক কিছু বদলেও যেতে পারে। আর মেয়েটিকে আগে মন শক্ত করতে হবে একটি কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য।

Share on Google Plus

About নিউজ রুম

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment