জীবন থাকলে সম্পর্ক থাকবেই। আর সম্পর্ক থাকলে থাকবে সমস্যা। প্রতিদিন ফেসবুকের ইনবক্সে ও ই-মেইলে আমরা অসংখ্য সম্পর্ক ভিত্তিক প্রশ্ন পাই, যেগুলোর কথা হয়তো কাউকেই বলা যায় না।
আপনি চাইলে নিজের এমনই কোন একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যার কথা লিখে জানাতে পারেন আমাদের। আমরা প্রতিদিন চেষ্টা করবো বাছাইকৃত কিছু সমস্যার সমাধানে কাঙ্ক্ষিত পরামর্শটি দেবার। সমস্যার কথা লিখে জানান আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। নাম গোপন রাখতে চাইলে লিখে দেবেন "নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক"।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা।
"আমার যখন ১১ বছর বয়স তখন আমার পরিবার আমাকে বিয়ে দেয় এবং আমার যখন ১৩ বছর বয়স তখন আমি প্রেগন্যান্ট হই। আমার বেবি মিস ক্যারেজ হয়ে যায়। তারপর থেকে সমস্যার মুখোমুখি হওয়া শুরু করি। কাউকে কিছু বলতে পারতাম না।
২০০৯ সালে আমার একটি দুর্ঘটনা হয় এবং আমার ডান দিক প্যারালাইসড হয়ে যায়। তখন আমি আম্মুর বাসায় চলে আসি। শ্বশুরবাড়ির আমার কোন খবর নিতো না। বরং, আমার পরিবার নিয়ে অনেক বাজে কথা বলতো। একটা সময় আমি পুরো পাগল হয়ে যাই। নেশা করতাম, আরো অনেক কিছু। ডিভোর্স হয়ে যায়।
তারপর আমার বড় ভাইয়া আমাকে একটা জব দেয়। ভালো ভেবে আমি জবটা করতে থাকি। ওখানে একজনের সাথে আমার খুব ভালো বন্ধুত্ব হয়। আমার সব কষ্ট মনে হল শেষ হয়ে গিয়েছে। আমরা বিয়ে করি কিন্তু পরিবার তা মানতে চায়নি। অনেক সমস্যা হয়। যেভাবেই হোক আমরা সবাইকে রাজী করিয়েছি।
ভালো ভাবেই ৩ মাস কাটলো। আমি আবার প্রেগন্যান্ট হলাম। সবাই গর্ভপাত করাতে বলল, আমি রাজী হইনি। অনেক কষ্ট করার পর আমার সন্তান এ দুনিয়াতে আসলো। তার কিছুদিন পর জানতে পারলাম আমার স্বামীর আরেকজনের সাথে সম্পর্ক আছে। তাও আবার আমার বেষ্ট ফ্রেন্ডের সাথে! আমাকে ছেড়ে ও চলে যায় আমার ওই ফ্রেন্ডের কাছের।
এক বছর থেকে আমি আবার জব করি। এখন আমি অনেক ভালো আছি কিন্তু এখন ও আমার কাছে মাফ চায় আর বলে টাকা লাগবে, টাকা পাঠাও। আমি বুঝতে পারছিনা ও আমাকে ভালোবাসে নাকি আমার টাকা? আর মধ্যে আমার একটা গাড়ী দুর্ঘটনা হয়। সেখানে আমার ৫ লাখ টাকা চলে যায়। কেউ এক টাকা দিয়েও হেল্প করেনি।
আমার স্বামী, আমার এক্সিডেন্টের পর আমার কাছে চলে আসে। আসার পর থেকে সে কাজ করেনা, নেশা করে। সারারাত না ঘুমিয়ে, দিনে ঘুমায়। আর বলে আমার সন্তান নাকি নাযায়েজ সন্তান। আমি নাকি কল গার্ল। আরো অনেক কথা। আমি কী করবো কোন কিছু ভাবতে পারছিনা। সবকিছু বলা সম্ভব হলনা। আমাকে একটু পরামর্শ দিবেন।"
পরামর্শ:
আমি কিছুই বুঝতে পারছি না আপু, ১১ বছর বয়সে কেন আপনাকে বিয়ে দেয়া হলো! আপনারা কি গ্রামে থাকতেন বা বিয়ে কি আত্মীয়ের মাঝে হয়েছিল?
হ্যাঁ আপু, আপনার চিঠি পড়েই বুঝতে পারছি যে অনেক কিছু আপনি লেখেন নি বা লিখতে পারেন নি। সবকিছু জানলে হয়তো পরামর্শ দেয়া সহজ হতো। যাই হোক, এটুকু পড়ে আমি যা বুঝতে পারছি সেটাই বলি।
না আপু, আপনার দ্বিতীয় স্বামী আপনাকে ভালোবাসে না। সে যদি ভালোবাসতো আপনারই বান্ধবীর সাথে প্রেম করে পালিয়ে যেত না। আর কেমনই বা বেস্ট ফ্রেন্ড আপনার যে বান্ধবীর ঘর ভাঙে? বুঝতেই পারছি আপু যে আপনি মানুষ চেনেন না। তাই বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি, দয়া করে আর কাউকে বিশ্বাস করতে যাবেন না। আপনার এই সো কলড স্বামীকে তো একেবারেই না! সে কেবলই টাকার জন্য ফিরে এসেছে, আর কিছুই নয়। আপনার টাকা সব হাতিয়ে নেয়া হয়ে গেলে আপনাকে নিঃস্ব করে রেখে সে কিন্তু আবারও পালিয়ে যাবে।
আপনি যা করবেন আপু, যত দ্রুত সম্ভব এই লোককে নিজের বাড়ি থেকে বের করুন। প্রয়োজনে পুলিশের বা পারিবারিক আইন ও সালিশ কেন্দ্রের সহায়তা নিন এবং ডিভোর্সের আবেদন করুন। ডিভোর্স নিয়ে এই লোকের হাত থেকে পাকাপাকি ভাবে মুক্তি নিয়ে নিন। এমনভাবে যেন সে আর আপনাদের জীবনে প্রবেশ করতে না পারে। প্রয়োজনে চাকরি বদলে অন্য কোন শহরে গিয়ে বাচ্চাকে নিয়ে থাকুন। বিদেশে চলে যাবার চেষ্টাও করতে পারেন।
আমি আবারও বলছি আপু, এই লোকের সাথে সম্পর্ক রাখলে সে কেবল আপনাকে ব্যবহারই করবে। আপনার টাকায় খেয়ে পরে অন্য মেয়েদের সাথে ফুর্তি করবে। পুরুষ ছাড়াও জীবন কাটে আপু। আপনি এই লোকের কাছ থেকে মুক্তি নিয়ে বাচ্চাটাকে মানুষ করার দিকে মন দিন। আমি অনুরোধ করবো সহসা আর প্রেম বা বিয়ের সম্পর্কে না জড়াতে। কখনো কখনো কিছুদিন একলা থাকলে মন ও মস্তিষ্ক দুটিই শান্ত হয়ে আসে। সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়।
0 comments:
Post a Comment