সূর্যোদয়ের সময়, মধ্যাহ্নে সূর্যের মধ্যাকাশে অবস্থানকালে এবং সূর্যাস্তের সময় সালাত জায়েয নেই। কেননা, ‘উকবা ইবন ‘আমির (রা.) বলেছেন- তিনটি ওয়াকত রাসূলুল্লাহ্ (সা.) আমাদেরকে সালাত আদায় করতে এবং আমাদের মৃতদের দাফন করতে নিষেধ করেছেনঃ সূর্যোদয় কালে, সূর্য উপরে উঠে যাওয়া পর্যন্ত; মধ্যাহ্ন কালে সূর্য হেলে পড়া পর্যন্ত; আর যখন সূর্য অস্ত যাওয়ার উপক্রম হয়, তখন থেকে অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। তার বক্তব্য এর উদ্দেশ্য হলো জানাযার সালাত্।
কেননা (ইজমা দ্বারা প্রমাণিত যে, উক্ত সময়) দাফন করা মাকরূহ নয়। আলোচ্য হাদীছ তার অর্থ-ব্যপকতার কারণে ইমাম শাফিঈ (র.) এর বিপক্ষে প্রমাণ। ফরজসমূহ এবং মক্কাকে বিশিষ্ট করার উদ্দেশ্য এবং ইমাম আবূ ইউসূফ (র.) এর বিপক্ষে প্রমাণ জুমুআর দিন মধ্যাহ্ন কালে নফল সালাত জাইয করার উদ্দেশ্য। ইমাম কুদূরী (র.) বলেন, ওই সময়ে জানাযার সালাত জাইয হবে না। আমাদের বর্ণিত হাদীছের দলীল মুতাবিক। সাজদায়ে তিলাওয়াতও জায়েয হবে না। কেননা, তা সালাতেরই অংশ বিশেষ। তবে সূর্যাস্তের সময় সে দিনের আসর আদায় করা যাবে।
সালাত ওয়াজিব হওয়ার বা হেতু হচ্ছে সময়ের সেই অংশ, যা বিদ্যমান আছে। (অর্থাত্ সালাত শুরুর পূর্ব মুহূর্ত)। কেননা, হেতুর সম্পর্ক যদি সমগ্র সময়ের সাথে হয়, তাহলে সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরে সালাত আদায় করা ওয়াজিব হয়। আর সময়ের বিগত অংশের সাথে যদি সম্পর্কিত হয়, তাহলে শেষ সময়ে সালাত আদায়কারী হয় সালাত কাযাকারী। বিষয়টি যখন এমনই হলো, তবে তো সে যেমন তার উপর ওয়াজিব হয়েছে, তেমনই আাদায় করেছে। আর অন্যান্য সালাত এর ব্যতিক্রম। কেননা সেগুলো পূর্ণাংগ সময়ে ওয়াজিব হয়েছে, সুতরাং অপূর্ণাংগ সময়ে তা আদায় হতে পারে না।
হিদায়া গ্রন্থকার বলেন, জানাযার সালাত ও তিলাওয়াতের সাজদা সম্পর্কে উল্লেখিত নাজাইযের অর্থ হলো মাকরূহ হওয়া। সুতরাং ঐ সময়ে কেউ যদি জানাযার সালাত আদায় করে কিংবা তখন সাজদার আয়াত তিলা্ওয়াত করে উক্ত তিলাওয়াতের সাজদা করে তাহলে জাইয হবে। কেননা, যেমন নাকিস সময়ে তা ওয়াজিব হয়েছে, তেমনি নাকিস সময়ে তা আদায় করা হয়েছে। কেননা জানাযা উপস্থিত হওয়া ও তিলাওয়াত করার মাধ্যমেই তা ওয়াজিব হয়। ফজরের পরে সূর্যোদয় পর্যন্ত নফল পড়া, এবং আসরের পরে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত নফল আদায় করা মাকরূহ।
কেননা বর্ণিত আছে যে, নবী (সা.) তা নিষেধ করেছেন। তবে এই দুই সময়ে কাযা সালাত ও তিলাওয়াতের সাজদা আদায় করতে পারে এবং জানাযার সালাত আদায় করতে পারে। কেননা, এই মাকরূহ হওয়া ছিলো ফরযের মর্যাদার ভিত্তিতে, যেন সম্পূর্ণ সময়টা সালাতে মশগুল-তুল্য হয়ে যায়। (এই মাকরূহত্ব) সময়ের নিজস্ব কোন প্রকৃতির কারণে নয়। সুতরাং ফরজসমূহের ক্ষেত্রে এবং যে সকল ইবাদত স্বকীয়ভাবে ওয়াজিব হয়েছে, যেমন, তিলাওয়াতের সিজদা, সেগুলোর ক্ষেত্রে সময়ের মাকরূহ হওয়ার হুকুম প্রকাশ পাবে না। আর সালাত (ও মানতকৃত নামায) এর ক্ষেত্রে তা প্রকাশ পাবে।
কেননা উক্ত ইবাদতে আবশ্যকতা তার নিজের পক্ষ থেকে সৃষ্ট কারণের সাথে সম্পৃক্ত। তাওয়াফের রাকাআতদ্বয়ের ক্ষেত্রে মাকরূহ প্রকাশ পাবে। এবং ঐ ব্যক্তির ক্ষেত্রেও মাকরূহ হওয়া প্রকাশ পাবে, যে নফল সালাত শুরু করে তা ভংগ হয়েছে। কেননা উক্ত সালাতের ওয়াজিব হওয়া তার নিজ কারণে নয়, অন্য কারণে। আর তা হলো তাওয়াফ খতম করা এবং শুরু করা সালাতকে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করা। ফজরের উদয়ের পর ফজরের দু’রাকাআতের অধিক নফল আদায় মাকরূহ।
কেননা সালাতের প্রতি আগ্রহ সত্ত্বেও উক্ত দুই রাকাআতের অতিরিক্ত কিছু নবী করীম (সা.) আদায় করেন নি। সূর্যাস্তের পর ফরযের পূর্বে কোন নফল আদায় করবে না। কেননা তাতে মাগরিবকে বিলম্ব করা হয়। তদ্রূপ জুমুআর দিন ইমাম যখন খুতবার জন্য (হুজরা থেকে) বের হবেন, তখন থেকে খুতবা শেষ হওয়া পর্যন্ত নফল আদায় করবে না। কেননা তাতে খুতবা শোনা থেকে অন্য-মনস্কতা হয়।
0 comments:
Post a Comment