হিন্দুদের কি বিয়ে করা যায়?



ইসলাম নারী-পুরুষের মধ্যে বিবাহ বন্ধনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে নারী ও পুরুষ তাদের জীবন সঙ্গী বেছে নেন এবং এর মাধ্যমে একটি পরিবার গঠিত হয়। এই পরিবারে ছায়াতলেই নীতি-নৈতিকতা ও গভীর ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে বেড়ে ওঠে ভবিষ্যত প্রজন্ম।

আর ইসলাম যেহেতু পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান, তাই পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে তার রয়েছে সুনির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা। যে নারী ও পুরুষের মিলনে পরিবার গঠিত হবে তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। অর্থ্যাৎ জীবন সঙ্গী বা সঙ্গিনী বেছে নেয়ার ক্ষেত্রে ‘ইসলাম ধর্মে গভীর বিশ্বাস থাকা’ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। 

বিষয়টি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে 
মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
وَلاَ تَنكِحُواْ الْمُشْرِكَاتِ حَتَّى يُؤْمِنَّ وَلأَمَةٌ مُّؤْمِنَةٌ خَيْرٌ مِّن مُّشْرِكَةٍ
“আর তোমরা মুশরিক নারীদের বিয়ে করো না,যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। মুশরিক নারী তোমাদের দৃষ্টিতে সুন্দরী মনে হলেও মু’মিন ক্রীতদাসী মুশরিক নারীর চেয়ে উত্তম।” (সুরা বাকারা-২২১)

এ আয়াতে মহান আল্লাহ মু’মিন নারীকে বিয়ে করার নির্দেশ দিয়ে বলছেন, যদি ঈমানদার নারী পাওয়া না যায় তাহলে মু’মিন দাসীকে বিয়ে করতে হবে। কারণ, মুশরিক নারীর চেয়ে মু’মিন দাসী উত্তম। এর কারণ হচ্ছে, মুশরিক কিংবা মুর্তিপুজক নারীর সঙ্গে পরিবার গঠন করে ওই পরিবার থেকে ভাল কিছু আশা করা যায় না।

হিন্দু বা মুশরিক নারী শিশুকাল থেকে তার পরিবারে মুর্তিপূজার যে প্রচলন দেখে এসেছে তা তার জীবনের অংশ হয়ে গেছে। মনে-প্রাণে সে ওই ধর্মবিশ্বাসকে ধারণ করেছে। ওই বাতিল বা মিথ্যা বিশ্বাস তার চোখের সামনে এমন একটি আবরণ তৈরি করে দিয়েছে যার ফলে তার পক্ষে সত্য এবং ইসলামের আবেদন উপলব্ধি করা কঠিন।

এমন একজন নারী তার কথা-বার্তা, আচার-আচরণ দিয়ে তার আশপাশের লোকজনকে নিজের ধর্মবিশ্বাসের দিকে টেনে নেয়ার চেষ্টা করে; যে বিশ্বাস মানুষকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যায়। এ বিষয়টি একজন মুসলমানের জন্য কোনো অবস্থায়ই কাম্য হতে পারে না।

পক্ষান্তরে একজন মুসলিম পুরুষ আল্লাহকে মেনে চলে এবং তাকে ভয় করে। এ ছাড়া, একজন প্রকৃত মুসলমানের কাজ হচ্ছে নিজের আচার-আচরণের মাধ্যমে মুশরিকদেরকে ইসলামের পথে দাওয়াত দেয়া।

কোনো মুসলিম পুরুষ যদি হিন্দু নারীকে বিয়ে করে তাহলে তাদের দু’জনের মধ্যে এই চিন্তা ও আচার-আচরণগত বিশাল পার্থক্য তাদের মধ্যে চরম মতানৈক্য সৃষ্টি করবে। তাদের মধ্যকার এ মতপার্থক্য দিন দিন বেড়ে যাবে এবং তা ঝগড়া-বিবাদে রূপ নেবে। এ অবস্থায় পারিবারিক অশান্তি ও কলহ অনিবার্য হয়ে পড়বে। এ ধরনের একটি পরিবারে যে সন্তান বেড়ে উঠবে সে কোনো অবস্থায়ই মু’মিন কিংবা আল্লাহর নেক বান্দা হতে পারবে না।

এ কারণে, ইসলামের বিশিষ্ট ফকীহগণ হিন্দুসহ সব মুশরিক নারী ও পুরুষের সঙ্গে মু’মিন পুরুষ ও নারীর বিয়েকে হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

অবশ্য এখানে একটি বিষয় স্পষ্ট আর তা হলো, একজন মুসলমানের কাছে তার ধর্মীয় বিশ্বাস এত বেশি গুরুত্বপূর্ণ যে, সে পার্থিব জীবনের জন্য যা কিছু চায় তার সবকিছুই ওই ধর্মবিশ্বাসকে বিকশিত করার পাথেয় হিসেবে চায়। সে ইসলামের জন্য সবকিছু বিলিয়ে দেয় এবং যে কোন মূল্যে দ্বীন ইসলাম প্রচার করে। এ ধরনের কোনো ব্যক্তি যদি কোনো হিন্দু বা মুশরিক নারীকে ভালোবেসে থাকে তাহলে তাকেও ইসলামের দাওয়াত দেয়া তার কর্তব্য।

এ অবস্থায় ওই নারী যদি ইসলামের সুমহান আহ্বানে সাড়া দিয়ে মুসলমান হয়ে যায়, তাহলে সে একদিকে একজন মুশরিককে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করার সওয়াব পাবে এবং অন্যদিকে তার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতেও তার আর কোন বাধা থাকবে না।

সুত্র:
১) সূরা বাকারা, ২২১নং আয়াত
২) মোহাম্মদ হোসেন তাবাতায়ী, তাফসিরুল মিজান, ২খ: পৃ:২০৯, বিরুত, ১ম প্রকাশনা ১৪১৭
৩) ইমাম খোমেনী (রহ:)’র ফতোয়ার বই তাহরিউল ওসিলা,পৃ:২৫২
সূত্র: রেডিও তেহরান
Share on Google Plus

About news zone

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment