নুহ (আ.)-এর মাধ্যমে নতুন পৃথিবী




৭৩. ...অতঃপর তাকে (নুহ আ.) ও তার সঙ্গে যারা নৌকায় ছিল, আমি তাদের উদ্ধার করি এবং (পৃথিবীতে) তাদের স্থলাভিষিক্ত করি। আর তাদের ডুবিয়ে দিয়েছি, যারা আমার নিদর্শন প্রত্যাখ্যান করেছিল। সুতরাং দেখো, যাদের সতর্ক করা হয়েছিল, তাদের কী পরিণাম হয়েছিল! [সুরা : ইউনুস, আয়াত : ৭৩ (শেষাংশ)]

তাফসির : আল্লাহ তাআলা নুহ (আ.)-কে সুদীর্ঘ জীবন দান করেছিলেন। তিনি প্রজন্মের পর প্রজন্মকে এই আশায় দাওয়াত দিয়েছেন যে তারা হয়তো ইমান আনবে। কিন্তু শতাব্দীর পর শতাব্দী অক্লান্তভাবে দাওয়াত দেওয়ার পরও তারা ইমান আনেনি। আল্লাহর চিরন্তন নীতি হলো, তিনি অবাধ্য জাতিকে সাময়িক অবকাশ দেন। সে হিসেবে তাদেরও অবকাশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা নুহ (আ.)-এর দাওয়াত তাচ্ছিল্যভরে প্রত্যাখ্যান করে। নুহ (আ.) তাদের দিবারাত্রি দাওয়াত দেন। কখনো গোপনে কখনো প্রকাশ্যে নিজ জাতিকে দ্বীনের পথে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা করেন। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘এই সুদীর্ঘ সময়ে তিনি কখনো চেষ্টার ত্রুটি করেননি, নিরাশও হননি।’ তাঁর জাতি তাঁকে বলেছিল, ‘হে নুহ! যদি তুমি বিরত না হও, তবে পাথর মেরে তোমার মস্তক চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে।’ (সুরা : শুআরা, আয়াত : ১১৬)

তবুও বারবার আশাবাদী হয়ে তিনি সবাইকে দাওয়াত দিতে থাকেন। এদিকে তাঁর সম্প্রদায়ের অনীহা, অবজ্ঞা, তাচ্ছিল্য ও ঔদ্ধত্য দিন দিন বৃদ্ধি পেতে থাকে। ইতিহাসবিদ ইবনে ইসহাক বলেন, ‘নিহত নবীরা ছাড়া অন্য কোনো নবী তাঁর জাতির কাছ থেকে নুহ (আ.)-এর মতো নির্যাতন ভোগ করেননি।’ (ইবনে কাসির)

তাই তাদের পাপ ষোলকলায় পূর্ণ হয়ে যাওয়ার পর আল্লাহর আজাব আসে। প্রবল প্লাবন পাপীদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। এই আজাব থেকে কেবল ইমানদাররা রেহাই পান।

নুহ (আ.)-এর চার ছেলে ছিল—সাম, হাম, ইয়াফিছ ও ইয়াম অথবা কেনআন। (তাফসিরে কুরতুবি) প্রথম তিনজন তাঁর ওপর ইমান আনেন। কিন্তু শেষোক্ত জন কাফির হয়ে প্লাবনে ডুবে মারা যায়। নুহ (আ.)-এর দাওয়াতে তাঁর জাতির হাতে গোনা কয়েকজন ইমানদার ব্যক্তি সাড়া দেন। তাঁরাই প্লাবনের সময় নৌকারোহণের মাধ্যমে নাজাত পান। ইমাম তিরমিজি (রহ.) বর্ণনা করেন, নুহ (আ.)-এর প্লাবন শেষে কেবল তাঁর তিন ছেলে—সাম, হাম ও ইয়াফেছের বংশধররাই অবশিষ্ট ছিল। (ইবনে কাসির)

হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘সাম আরবের পিতা, হাম হাবশার (আফ্রিকা, ইথিওপিয়া) পিতা এবং ইয়াফেছ রোমানদের (গ্রিক) পিতা। (তিরমিজি, আহমদ)

হজরত ইবনে আব্বাস ও কাতাদাহ (রা.) বলেন, ‘নুহ (আ.) পরবর্তী মানবজাতি সবাই নুহের বংশধর।’ (তিরমিজি ও আহমদ) আল্লাহ বলেন, ‘আমি তার (নুহের) বংশধরদের অবশিষ্ট রেখেছি বংশপরম্পরায়।’ (সুরা : সাফফাত, আয়াত : ৭৭)

সাম তিন ছেলের মধ্যে বড় ছিলেন। তিনি ছিলেন আরব জাতির পিতা। তাঁর বংশধরদের মধ্যেই ছিলেন হজরত ইব্রাহিম, ইসমাঈল ও ইসহাক (আ.)। ইসমাঈল (আ.)-এর বংশধর ছিলেন মানবজাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান হজরত মুহাম্মদ (সা.)। ইসহাক (আ.)-এর বংশধরদের মধ্যে ছিলেন ইয়াকুব, ইউসুফ, মুসা, দাউদ, সোলায়মান, ইউনুস, ইলিয়াস, ঈসা (আ.) প্রমুখ নবী ও রাসুল। প্লাবনের পর নুহ (আ.)-এর সঙ্গে নৌকারোহী মুমিন নর-নারীদের মাধ্যমে পৃথিবীতে নতুনভাবে আবাদ শুরু হয়। তিনি তাদের সত্যের পথে পরিচালিত করেন। এ কারণে তাঁকে ‘মানব জাতির দ্বিতীয় পিতা’ বলা হয়।

গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ
Share on Google Plus

About news zone

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment