যৌনতা বিষয়ে যেভাবে কথা বলবেন আপনার সন্তানের সাথে

কথা বলবেন আপনার সন্তানের সাথে

বাংলাদেশের মত একটা দেশে বাবা মায়েরা সন্তানের সাথে যৌনতা নিয়ে কথা বলছে এটা খুবই অস্বস্তিকর আর অদ্ভুত বিষয় মনে পারে। কিন্তু বিষয়টি আপনার যেমনই লাগুক না কেন আজকের সময়ে সন্তানকে আপনি যখন মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলতে চান তখন যৌনতার মত একটি স্বাভাবিক, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বাদ দিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, আপনি কথা না বললেও এই বিষয়ে কথা চলছে চারিদিকে। মিডিয়া, ইন্টারনেট, বন্ধুমহল সবদিকে এমন অনেক ঘটনা ঘটে যা তার আগ্রহ বাড়াতে পারে, তাকে ভুল তথ্য দিতে পারে। তাই আপনারই উচিৎ আগেভাগেই সঠিক তথ্য দেওয়া।

জিল পি ওয়েবার একজন ক্লিনিকাল সাইকোলজিস্ট। তিনি ওয়াশিংটন ডিসিতে ব্যাক্তিগত চ্যাম্বারে অনুশীলন করেন। নিজের রোগীদের কাছে এবং আশেপাশের মা বাবাদের মধ্যে প্রায়ই তিনি সন্তানদেরকে নিয়ে তাদের নানান চিন্তার কথা শোনেন। যৌনতা সেইসব সমস্যার একটি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনি তুলে ধরেছেন ৫ টি উপায়, কিভাবে সহজভাবে আপনার সন্তানের সাথে কথা বলবেন যৌনতা নিয়ে।

১। তুমি আমাকে যে কোন প্রশ্ন করতে পার
শিশুরা যখন নিজেদের শারীরিক বিষয়াদি নিয়ে ছোটখাট আগ্রহ প্রকাশ করে বা করতে দ্বিধা করে না, তার মানে সে আপনার সাথে যথেষ্ট সহজ, স্বাভাবিক। শিশুরা কিন্তু সাবলীলই হয়, আমরা তাদেরকে থামিয়ে দিই। একটা শিশু যখন সরল মনে তার গর্ভবতী মায়ের পেট ছুঁয়ে জিজ্ঞেস করে, বেবি কি করছে, বেবি কিভাবে এল, কিভাবে তার সাথে দেখা হবে তখন তার সরল প্রশ্নের মূল্যায়ণ করুন। তাকে গুছিয়ে উত্তর দিন। আপনি যদি লজ্জা পান, ধমক দেন সে কিন্তু দমে যাবে না। আর কোথও উত্তর খুঁজতে যাবে। তাই নিজেই উত্তর দিন।

২। যদি উত্তর না জানা থাকে তাহলে খুঁজুন
বাচ্চাদের অনেক প্রশ্নের উত্তর হয়ত আপনি জানেন না। বা জানলেও কিভাবে উত্তর দেবেন বুঝতে পারছেন। তাহলে জানার চেষ্টা করুন। স্বামী-স্ত্রী দুইজন মিলে ভাবুন কি বললে আপনার সন্তান সুন্দর একটি বিষয় হিসেবে এটিকে গ্রহণ করবে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে তাকে একটি মনগড়া গল্প বলে দেবেন। কখনোই আপনার সন্তানকে মিথ্যা বলবেন না। তাকেই সত্যই বলুন, গুছিয়ে বোধগম্য করে বলুন, এমনকি যদি তার বয়স মাত্র ৫ বছরও হয়।

৩। কথা বলা কঠিন হতে পারে
অনেক বাচ্চারা হয়ত কোন প্রশ্নই করবে না। তার মানে এই নয় যে তার মনে প্রশ্ন নেই। আপনার শিশুকে প্রশ্ন করতে বা এধরণের বিষয়ে কথা বলতে আগ্রহী করে তুলুন। তাঁর সামনে নিজেরাই টুকটাক শারীরবৃত্তীয় বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলুন। এতে সে প্রশ্ন করতে সহজ বোধ করবে। তার মনে হবে যেহেতু আপনি সহজেই এগুলো আলোচনা করছেন তার মানে আলোচনা করা যায়, সেও করতে পারে।

৪। খেয়াল করুন
আপনার শিশুটি ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। বয়সসন্ধিকালে তার অনেক রকম শারীরিক পরিবর্তন হবে। নিজের এই পরিবর্তন বুঝতে সে কিন্তু আপনার কাছেই আশ্রয় খুজবে। মুখ ফুটে সবসময় নাও বলতে পারে। আপনাকেই বুঝে নিতে হবে। আসলে বয়সসন্ধিকাল শুরুর অনেক আগে থেকেই কথা বলতে শুরু করুন। তাকে বুঝিয়ে বলুন পরিবর্তন হচ্ছে ধীরে ধীরে আর এটা স্বাভাবিক।

৫। তুমি এই ব্যাপারে কি মনে কর
যতই আপনার সন্তান বড় হবে আপনি অবশ্যই চাইবেন শারীরিক ঘনিষ্ঠতা বা সম্পর্ক নিয়ে সে আপনার সাথে কথা বলুক। তারাও আসলে বলতে চায়। তারা এমন মানুষ খোঁজে যাদেরকে তারা বিশ্বাস করতে পারবে। তাই যখনই তাদেরকে ভালোবাসা বা অনুরাগ বিষয়ে কোন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন তখনই পালটা প্রশ্ন করুন সে এই বিষয়ে কি ভাবছে বা তার মত কি! আলোচনাটাকে সজীব করুন, সহজ করুন। আপনিও তাকে বুঝতে পারবেন, সেও আপনাকে বিশ্বস্ত বন্ধু হিসেবেই গ্রহণ করবে।

যৌনতা বিষয়ে কথা বলা শুধু কথা বলার উদ্দেশ্যে জরুরী নয়। এভাবে আপনার শিশুর সাথে আপনার ঘনিষ্ঠতা বাড়বে। আপনি তাকে পথ দেখাতে পারবেন। তারা অসুস্থ কোন চর্চার সাথে জড়িয়ে যাবে না।

Share on Google Plus

About নিউজ রুম

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment