"ওর সাথে একই বিছানায় থাকতে আমার ঘৃণা হয়, আমার বয়স মাত্র ২৭..."

"ওর সাথে একই বিছানায় থাকতে আমার ঘৃণা হয়, আমার বয়স মাত্র ২৭..."


জীবন থাকলে সম্পর্ক থাকবেই। আর সম্পর্ক থাকলে থাকবে সমস্যা। প্রতিদিন ফেসবুকের ইনবক্সে ও ই-মেইলে আমরা অসংখ্য সম্পর্ক ভিত্তিক প্রশ্ন পাই, যেগুলোর কথা হয়তো কাউকেই বলা যায় না। 

আপনি চাইলে নিজের এমনই কোন একান্ত ব্যক্তিগত সমস্যার কথা লিখে জানাতে পারেন আমাদের। আমরা প্রতিদিন চেষ্টা করবো বাছাইকৃত কিছু সমস্যার সমাধানে কাঙ্ক্ষিত পরামর্শটি দেবার। সমস্যার কথা লিখে জানান আমাদের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে। নাম গোপন রাখতে চাইলে লিখে দেবেন "নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক"। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন জানিয়েছেন নিজের সমস্যার কথা। 

"আমার বয়স যখন ১২/১৩ তখন আমার বাবা মা আমাকে বিয়ে দেন আমার বাবার বোনের ছেলের সাথে। বিয়েতে শর্ত থাকে আমি বড় হওয়ার পর আমরা একসাথে থাকবো। আমার স্বামী আমার চেয়ে ১৮ বছরের বড়। কিছুদিন পর ও আর এগুলো মানতে চায়না। তারপর ও আমাদের বাসায় এলে একসাথেই থাকতাম। 

আমি অল্প বয়সে মা হয়ে যাই তাই পড়াশোনাটাও হয়নি। বাচ্চা, ঘর সামলে আর হলোনা পড়া। SSC পরীক্ষাটা দিতে পারলাম না। অনেকদিন ভাল চলছিল।কিছুদিন পর ওর সাথে যখন ওর বাসায় থাকা শুরু করলাম ওর কিছু খারাপ অভ্যাস আমার সামনে আসে। অন্য মেয়েদের প্রতি দুর্বলতা। একটা কথা বলে নিই,সেক্সুয়াল ব্যাপারে খুব আগ্রহী ও। আমি অসুস্থ হলেও জোর করতো সম্পর্ক করতে, মানা করলে এমন কি গায়েও হাত তুলতো! 

কিছুদিন আগে ওর একটা মেয়ের সাথে ফেসবুকে বেশ গভীর সম্পর্ক জেনে ফেলি আমি। ওদের বিয়ে করার কথাও ছিল। জানার পর বলে এগুলো মিথ্যে।ও মজা করেছে। ও নাকি আমাকেই অনেক ভালবাসে। ও জব করে।ওইখানে খুব বাজে চ্যাটিং ছিল। ও যে এমন করতে পারে কেউ বিশ্বাস করবেনা,খুব ভদ্র স্বভাব আর ভাল ব্যবহার ওর মুখোশ। 

আমি ওকে একদম বিশ্বাস করিনা। কী করবো কিছু বুঝিনা? আমি এখন ২ ছেলের মা, নিজে কিছু করিনা। বাবা মায়ের কাছে গেলে, ছেলেদের মানুষ করবো কীভাবে? ওনারা গ্রামে থাকেন। আমিও যে পারছিনা প্রতিদিন এই খারাপ লোকটার সাথে কাটাতে। খুব বিশ্বাস আর ভালবাসতাম ওকে। আমাকে একটু ভালভাবে বাঁচার উপায় বলে দিবেন? ওর সাথে একই বিছানায় থাকতে ঘৃনা  লাগে। আমার বয়স এখন ২৭। কীভাবে কাটবো বাকি জীবন? প্লিজ কিছু উপায় বলুন।"  



পরামর্শ:

সত্যি বলতে কি আপু, আপনার পরিস্থিতি আসলে অত্যন্ত জটিল। নিজের বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পথ নেই আর স্বামীর বাড়িতে আপনি থাকতে পারছেন না, এদিকে দুটো সন্তানের ভবিষ্যতের কোথাও ভাবতে হবে- সব মিলিয়ে আসলে মানিয়ে নেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। কথাটা বলতেও আমার খারাপ লাগছে, কিন্তু সম্ভবত এটাই একটা রাস্তা। 

তবে হ্যাঁ আপু, বিষয়টি সাময়িক। সাময়িক এই কারণে বলছি যে মানুষের জীবন কখনো এক রকম থাকে না। আপনি ভালোবাসায় প্রতারিত হয়েছে বলে এখন খুব কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্ট আস্তে আস্তে কমে আসবে, কোন কষ্টের তীব্রতাই বেশিদিন থাকে না। ভালোবাসার মানুষ হিসাবে না হোক, সন্তানদের পিতা হিসাবে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা করুন। সংসারের প্রতি নিজের দায়িত্ব পালন করুন, নিজেকে নিজের মত গুটিয়ে নিন। হ্যাঁ, আপনার শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই বটে।

 কিন্তু কিছু তো নিশ্চয়ই আছে যেটা আপনি ভালো পাবেন? যেমন সেলাই বা রান্না? বা অন্য কোন হাতের কাজ? না পারলে এগুলো শিখতে পারেন ও ঘরে বসেই অর্থ উপার্জনের জন্য নানা কাজ করতে পারনে। চাইলে অনলাইনে কোন ব্যবসাও শুরু করতে পারেন। মানুষ মন থেকে চাইলে অনেক কিছু পারে আপু। আর যখন দেখবেন যে একটা কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন এবং অর্থ উপার্জন করছেন, তখন আপনার খারাপ লাগা অনেক কমে যাবে। প্লাস, স্বামীর সাথে যদি মানিয়ে নিতে নাই-ই পারেন, তখন ডিভোর্স দিতেও অসুবিধা থাকবে না। নিজের পায়ে দাঁড়াতে আপনাকে হবেই আপু। কারণ কেবল আর্থিক কারণে জোর করে  কারো সাথে সম্পর্ক চালিয়ে নেয়াটাকে আমি সমর্থন করি না। 

স্বামীর সাথে সম্পর্কের উন্নয়ন কোনভাবে করা যায় কিনা, সেই চেষ্টাও করতে পারেন। তিনি আপনার স্বামী, তাঁকে আপনিই ভালো চেনেন। একটু শাসনে যদি সংশোধন সম্ভব হয় তাহলে নতুন করে সব শুরু করুন অতীত ভুলে। আর সেটা সম্ভব না হলে নিজের মাঝেই নিজের দুনিয়ে খুঁজে নিতে হবে আপু। সেটাই একমাত্র উপায়।  পৃথিবীতে আপু কেউ কারো আপন নয়, নিজের ভরসা কেবল আপনি নিজেই- এটা মনে রেখেই সামনে অগ্রসর হোন। 

Share on Google Plus

About নিউজ রুম

This is a short description in the author block about the author. You edit it by entering text in the "Biographical Info" field in the user admin panel.
    Blogger Comment
    Facebook Comment

0 comments:

Post a Comment